কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা রাজপথে নেমেছেন, সংখ্যায়ও তারা ব্যাপক। আন্দোলনের প্রতি একধরনের জনমসর্থনও আছে। আন্দোলনকারীরা শুরু থেকেই সরকার বিরোধী নয় বরং সরকারি রাজনৈতিক আদর্শের প্রতি অনুরক্ত বা দরদী প্রমাণ করতে অতিরিক্ত মাত্রায় উৎসাহী ছিলেন। ফুলচন্দন দিয়ে পুলিশকে ভাইয়া বলে বুকে জড়িয়ে নিতে চাইলেও পুলিশ নির্মমভাবে লাঠিপেটা ও টিয়ারশেল ছুঁড়ে ফুলের জবাব দিয়েছে। আহত হয়েছেন শতাধিক আন্দোলনকারী। তারা সম্ভবত ভুলে গেছেন একটি দেশে গণতন্ত্র না থাকলে, জনগণের শাসন না থাকলে পুলিশও নিরপেক্ষভাবে তার দায়িত্ব পালন করতে পারে না। তখন পুলিশকে ক্ষমতাসীনদের লাঠিয়াল হিসেবেই ব্যবহার করা হয় বা পুলিশ বাধ্য হয়। তারপরেও রাজনৈতিক ভাবে পঙ্গু হয়ে থাকা সব রকম বিরোধিতার এই সময়ে কোটা আন্দোলনকে কীভাবে দেখতে হবে তা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন জেগেছে। আন্দোলনকারীদের অসহায়ত্বের পরেও এই আন্দোলনের রাজনৈতিক পাঠের গুরুত্ব খাটো করে দেখার সুযোগ নাই। মোটা দাগে এইসব পয়েন্টই আজ বলব।
শাহবাগের ছায়া
এই আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর ভেতর থেকে। যারা জমায়েত হয়েছেন তারাও বড় অংশে মধ্যবিত্ত শ্রেণীরই অংশ। তারা মধ্যবিত্ত এটা তাদের অপরাধ না। কথাটা এই জন্য বলা যে এই শ্রেণীর আন্দোলনের চরিত্র বা ফলাফল কি হবে তা আগে থেকেই জানা যায়। যারা লেনিনের রাজনৈতিক লেখালেখির সাথে পরিচিত তারা জানেন, এই ধরনের রুটি রুজি বা অর্থনীতিবাদী আন্দোলনকে মার্ক্সীয় বিবেচনায়, ‘পেটি-বুর্জয়া’ শ্রেণীর আন্দোলন বলে। পেটি মানে এই যে নরমপন্থি জায়গা থেকে কিছু সুবিধার জন্য সোচ্চার হওয়া এটার ফলাফল দাঁড়ায় এরা সফল হলে বুর্জোয়া শ্রেণীর তাবেদারে পরিণত হবে। মার্ক্সবাদের সাথে সবার একমত হওয়ার দরকার নাই। কিন্তু এই বিবেচনার সাথে আজকের আন্দোলনের বাস্তবতার চিত্র হুবহু মিলে যায়। যেমন ধরেন, এই আন্দোলন সফল হলো, কোটা ব্যবস্থা সংষ্কার হলো। এদের মধ্যে অনেকে চাকরিও পেল। তো এই চাকরি পেয়ে এরা যাদের সেবা করবে বা স্বার্থ রক্ষা করবে তারা বুর্জোয়া বা শাসক শ্রেণী। সেটা যে দলই ক্ষমতায় আসুক।
প্রকৃত উন্নয়ণমূখী দেশে সরকারি চাকরিকে মোস্ট পপুলার ধরা হয় না। ক্রেজ থাকে প্রাইভেট চাকরিতে। চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ার গড়ার জন্যে তো ক্যাপাসিটি থাকা চাই। গড়পড়তা পড়াশোনা দিয়ে একটা সরকারি চাকরি বাগিয়ে আরামে জীবন পার করে দেয়ার জন্য যে দেশের কোটি কোটি তরুণ উগ্র প্রতিযোগিতা করে, সেই দেশের ভবিষ্যৎ তো ফটকাবাজদের হাতেই থাকবে
যেটা বলছিলাম, এই আন্দোলনের সাথে শাহবাগের মিল শুধু শ্রেণীগত দিক থেকেই নাম, চেতনাগত দিক থেকেও। আন্দোলনকারীরা ভাল করেই জানেন, এই সরকারের আমলে যে কোন আন্দোলনকে জামায়াত-বিএনপির চক্রান্ত বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি হুমকি আখ্যায়িত করে নির্মম ভাবে দমন করা একটা সাধারণ ঘটনা। ফলে তারা প্রথমেই চেতনার ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে নিয়েছে। বুকে, মাথায়, হাতের প্লেকার্ডে বঙ্গবন্ধুর ছবি বহন করছে। শেখ হাসিনার উন্নয়নের প্রশংসা করে বক্তব্য দিচ্ছে। শেখ হাসিনা যদিও সাফ বলে দিয়েছেন, কোটা ব্যবস্থা থাকবে। তাই আন্দোলনকারীরা পড়েছে উভয় সংকটে। না পারছে দাবি ছাড়তে না পারছে সরকার প্রধান হিসেবে দেয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সরাসরি আন্দোলন করতে। ফলে শাহবাগও যেমন চেতনার পক্ষে থেকেই বিচারের নামে ফাঁসি চাইছিল। এরাও নব্য মুজিববাদী সেজে কোটার ঝামেলা এড়ায়ে চাকরির সুবিধাটা নিতে চান। অন্যদিকে রাজনৈতিক ভাবে শাহবাগপন্থিরা যেমন অশিক্ষিত ছিল, চিন্তাবুদ্ধিতে অপরিণত ছিল। ছাত্রলীগের ছত্রছায়াকে ভাঙতে ব্যর্থ হয়েছিল, এরাও তাই। এখানেও ছাত্রলীগ সক্রিয় আছে। কারণ চেতনার রাজনীতি করলে কোটা জিনিসটা তাদেরও রুটিরুজির জন্য সমস্যা। তাই অনেক লীগ নেতারও অংশগ্রহণ আছে এই আন্দোলনে। তবে অতি পরিচিত নেতারা একটু আড়ালেই থাকছেন, শাহবাগেও যেমন ছিল।
শিক্ষিত বেকার
যারা কোটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, এরা নিজেদের শিক্ষিত বেকার হিসেবে মেনে নিতে চান না। তাই দেশে যখন বিচার বিভাগ ধ্বংস হয়, যখন বিনা বিচারে হত্যার উৎসব হয়, যখন গুম একটা ঐতিহ্য হয়ে ওঠে, এরা নীরবে বসে বিভিন্ন দেশের নাম, মুদ্রা এগুলা মুখস্ত করেন। ‘এমপিথ্রি’ পড়েন গভীর নিষ্ঠার সাথে। গুগলের যুগেও তথ্য উপাত্তকে তারা পবিত্র জ্ঞান মনে করে। এদের বড় অংশই সুবিধার জন্য সরকারি দলের সাথে যুক্ত থাকতে বাধ্য হলেও (এখন হলে থাকতে হলে তো লীগ করতেই হবে) বেশির ভাগই, ‘আই হেট পলিটিকস’ জেনারেশন। এরাই কনজ্যুমার জেনারেশন, রাজনীতি ঘৃণা করে। এরা সক্রিয় রাজনীতি বা জনগণের জন্য রাজনীতির ধারণায় বিশ্বাসী না। কিন্তু যেই রাজনীতির কারণে দেশ আজ এই হালতে পৌঁছেছে, সেই রাজনীতির প্রতি টু শব্দটি না করেই দেশের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে আরামে জীবন ধারণের স্বপ্নে বিভোর থাকেন। এরা মূলত ভাল কনজ্যুমার হওয়াটাই জীবনে সফল হওয়া মনে করেন। ভালো চাকরি করবেন, ভালো ঘরে বিয়ে করবেন, মনের খুশিতে শপিং করবেন, আনন্দ-ফূর্তিতে জীবন পার করবেন, এটাই বেসিক স্বপ্ন এদের। এখানে কোন কালেকটিভ স্বার্থ নাই। সামগ্রিক জনগণের জন্য কোন ভাবনার অবকাশ নাই।
তো ধরে নিলাম, এই স্বপ্ন দেখার অধিকার তার আছে। কিন্তু সে যে শিক্ষিত, এটা কি ভাবে বুঝব। বাংলাদেশের শিক্ষার ধরণটা না জ্ঞানভিত্তিক, না কর্মদক্ষতা ভিত্তিক। এটা একটা খচ্চর মার্কা শিক্ষা ব্যবস্থা। এখনও এদেশে শিক্ষাকে ভাগ্য উন্নয়ন বা রাজনৈতিক ভাবে বললে, শ্রেণী উন্নয়নের সোপান হিসেবে দেখা হয়। গরিবের ছেলের সাহেব হওয়া বা জাতে ওঠার একমাত্র মাধ্যম মনে করেন এই শিক্ষাকে। মধ্যবিত্ত নিজেকে উচ্চবিত্ত করতে বেছে নেন এই শিক্ষাকেই। কিন্তু যেহেতু এই শিক্ষায় জ্ঞানের প্রায় কিছুই অর্জন করা সম্ভব না। তাই সনদ নামের কাগজটিকে ভাগ্যকবজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য এখন শিক্ষা শেষে পরিবারের পক্ষ থেকে ঘুষ নিয়েও প্রস্তুত থাকতে হয়। কোন চাকরি করবেন তার জন্য সনদের পরেই সব চেয়ে জরুরি এখন ঘুষের টাকার বন্দোবস্ত করতে পারা।
এই শিক্ষিত জেনারেশন মোটামুটি অশিক্ষিত ও নৈতিক ভাবে খুবই নিচু প্রকৃতির, ব্যতিক্রম আছে যদিও। আমি মোটাদাগে বলছি। আমাদের দেশে অনার্স পড়া হয় ৪ বছর ধরে। ৪ বছর ধরে একটা বিষয়ে বিশেষ পারদর্শিতার জন্য এই উচ্চ শিক্ষাটা। তো ধরেন, সারা দেশে কি পরিমাণ ছেলে রাজনীতি, বিজ্ঞানে, বা অথনীতিতে অনার্স পাশ করেন? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় মিলে সংখ্যাটা বিপুল। তো এবার দেখেন দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতির হালতটা কেমন? এই শিক্ষার কোন প্রভাব তো সমাজে এবং দেশে নাই। তার মানে আসলে কী শিখি আমরা? কাজেই এই উচ্চশিক্ষা একটা ফাঁকা আওয়াজ। কোন দক্ষতা তৈরি হয় না। হলে প্রতি বিষয়ে বা সেক্টরের জন্য এতো উচ্চশিখিত ছেলেমেয়ে থাকার পরেও দেশের এই হালত কেন? জানি অনেকে দ্বিমত করবেন। দেখেন, আপনি এত উচ্চশিক্ষিত, এত ডিগ্রি আছে তো বাংলাদেশের সব বড়বড় চাকরির পদে ভারতীয় নাগরিক কেন? চাকরির বাজারে ভারতীয় নাগরিকদের প্রভাব ও দখলদারিত্ব এখন সবাই জানেন। তো আপনার এত উচ্চশিক্ষা কী করল, কী করছে তাহলে? কাজেই ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে একটা অনার্স ডিগ্রি নিলেই মেধাবী বা দক্ষ হয়ে গেলেন এটা তো মানা যাচ্ছে না। জাতি হসেবে আমরা শিক্ষা বা জ্ঞানের কাঙাল না হলেও ডিগ্রির কাঙাল, এটা মানতে হবে।
অন্যদিকে এক শ্রেণীর ছেলেমেয়েরা কোন রকমে ডিগ্রি নিয়ে, স্বজনপ্রীতি, ঘুষ, মাস্তানি, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে চাকরির বাজারে ঝাপিয়ে পড়ার ফলে দেশের প্রকৃত দক্ষ ও মেধাবীরা বিদেশের দিকে বেশি নজর রাখেন। সুযোগ পেলেই বিদেশ চলে যান। এবং চেষ্টা করেন কোন মতেই যেন আর ফিরতে না হয়। এই হল আমাদের দক্ষ ও উচ্চশিক্ষিতদের হালচাল।
এভাবে সরকারি চাকরির জন্য বংশের সবাই মিলে যে ভাবে চেষ্টা চালান তা দেখতেও বিশ্রী লাগার কথা। মোটামুটি সবার ধারণা, সরকারি চাকরি একটা বাগাতে পারলেই জীবন নিরাপদ। কাজও কম, আবার কাজ পারুক না পারুক চাকরি যাবে না। চাকরি শেষে টাকা আছে। আর সবচেয়ে যেটা আকর্ষনীয়, বেতন যেমন তেমন ঘুষের দরজা খুলে যাবে। সরকারি চাকরি যেন টাকা বানানোর মেশিন। তাই সরকারি চাকরি নিয়ে এক ধরনের হিংস্র প্রতিযোগিতা চলছে। অথচ প্রকৃত উন্নয়ণমূখী দেশে সরকারি চাকরিকে মোস্ট পপুলার ধরা হয় না। ক্রেজ থাকে প্রাইভেট চাকরিতে। চ্যালেঞ্জিং ক্যারিয়ার গড়ার জন্যে তো ক্যাপাসিটি থাকা চাই। গড়পড়তা পড়াশোনা দিয়ে একটা সরকারি চাকরি বাগিয়ে আরামে জীবন পার করে দেয়ার জন্য যে দেশের কোটি কোটি তরুণ উগ্র প্রতিযোগিতা করে, সেই দেশের ভবিষ্যৎ তো ফটকাবাজদের হাতেই থাকবে। কাজেই এটাকে মেধার প্রতিযোগিতা হিসেবে যে ভাবে দেখা হয় সেই দেখার ধরণটায় সমস্যা আছে।
যখন কোটাবিরোধিরা, শেখ মুজিবের ছবি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সরকারের প্রতি সমর্থন, সব সাথে নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নেমেছেন, তখন এই চেতনার ফাঁপা বয়ানটা যে আসলে সত্য ছিল না, তা উদাম হয়ে গেল। চেতনা থাকলেও বা আপনি চেতনার পক্ষের হলেও এই চেতনা আপনার সব দাবি ও ন্যায্য চাওয়া পূরণ করতে পারবে না। এটা এবার প্রমাণ হয়ে গেল
চেতনার সংকট
আসলে এই পয়েন্টটা লেখার জন্যই লেখাটা শুরু করেছি। এই কোটাবিরোধী আন্দোলনের ফলে সরকার একটা মধুর সমস্যায় পড়েছে। আমরা সবাই জানি, ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে দেশের সাধারণ মানুষ, সেনা, কৃষক, বাম রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেছেন। দেশের এই মুক্তির সংগ্রামের একটা দলীয় ইতিহাস এই সরকার চালু করেছে। এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রাজনীতির নামে ৭১ সালের সমস্ত জন-আকাঙ্খার বিরুদ্ধে একটা ফ্যাসিবাদি শাসন ক্ষমতা চালু করেছে। তো এই মুক্তিযুদ্ধে অবদান থাক বা না থাক চেতনার ঠিকাদারি ধরে রাখার জন্য হলেও মুক্তিযুদ্ধ-বান্ধব অবস্থানে সরকারকে থাকতে হবে। কাজেই কোটার প্রশ্নটা সরকার সহজে মীমাংসা করতে পারছে না। আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ হাসিনা সরাসরি বলে দিয়েছেন, কোটা থাকবে। এটা চেতনার রাজনীতির জন্য দরকারি। অন্যদিকে যারা রাজনীতি করেন সবাই তো মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়ে বা নাতিপুতি না। তাই কোটার বিরুদ্ধে অনেকেই থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তো সরকার নিজের দলের ভেতরেই একটা ঝামেলায় পড়েছে।
এই যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা উস্কে দিয়ে একনায়কতন্ত্র, এত প্রাণহানি, এত গুম, সব তো মুক্তিযুদ্ধের মূল অঙ্গীকারের বিরুদ্ধে। তারপরেও এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কথাটা একটা কথার কথা হিসেবে, জনপ্রিয় প্রচার হিসেবে, ক্ষমতার অস্ত্র হিসেবে ক্রমাগত ব্যবহার করে চলেছে। এবার যখন কোটাবিরোধিরা, শেখ মুজিবের ছবি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সরকারের প্রতি সমর্থন, সব সাথে নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নেমেছেন, তখন এই চেতনার ফাঁপা বয়ানটা যে আসলে সত্য ছিল না, তা উদাম হয়ে গেল। চেতনা থাকলেও বা আপনি চেতনার পক্ষের হলেও এই চেতনা আপনার সব দাবি ও ন্যায্য চাওয়া পূরণ করতে পারবে না। এটা এবার প্রমাণ হয়ে গেল। কাজেই এই আন্দোলনের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দিক হল মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বয়ানটার অকার্যকরতার ব্যাপারটির উদাম হওয়া। এটাই সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক এই ঘটনার।
আজকের মতো শেষ করি, কোটাবিরোধী আন্দোলনের স্বার্থপর চরিত্রের সমালোচনা করার পরেও এটা না বলে উপায় নেই, এই ধরনের কোটা কোন সুস্থ শাসন ব্যবস্থার দ্বারা প্রয়োগ হওয়া সম্ভব না। এটা চরম অন্যায়। কিন্তু যে দেশে রাজনীতি করতে চাইলে মরতে হয়। রাজনীতি করার অধিকার নাই। ভিন্ন মতের চিন্তার কোন জায়গা নাই। নিজেদের বাইরে জনগণের অধিকার বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নাই, সেই দেশের এমন পরিবেশে একটা চাকরি নিয়ে নিজে ভাল থাকার চেষ্টার আন্দোলন আসলেই হতাশাজনক। কে না জানে, একটি দেশের গণতন্ত্র ঠিক থাকলে। শাসন কাঠামোর ওপর বা ক্ষমতার ওপর জনগণের নিয়ন্ত্রণ থাকলে এই ধরণের আন্দোলন শুরু করারই দরকার হতো না। এগুলা টেবিলেই সমাধান হওয়ার কথা। কাজেই দেশের রাজনীতি জনবান্ধব না করে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরির লড়াই না করে এই ধরণের সুবিধাবাদী আন্দোলনের কোন ভবিষ্যৎ নাই। যে কোন আন্দোলনের রাজনৈতিক দিশা না থাকলে তা হতাশা ও প্রাণের অপচয়ের মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
কাজেই চালাকি করে অরাজনৈতিক না থেকে আওয়াজ তুলি, ‘রাজনীতি করা আমার অধিকার’। সমস্ত ভিন্নমতের পাশাপাশি অবস্থান করার অধিকার রয়েছে। নিজের পেশাগত বা ক্ষুদ্র ব্যক্তিস্বার্থ দিয়ে সব কিছু চিন্তা না করে গোটা দেশকে, দেশের জনগণকে নিজের সত্ত্বার অংশ মনে করি। সবার হক নিয়ে সোচ্চার হই। নাগরিক হিসেবে নিজের সম্মান নিয়ে বাঁচার জন্য উপযুক্ত কাঠামো তৈরি করি। ভাল প্রতিষ্ঠান তৈরি করি। আন্তর্জাতিক দুনিয়ার উপযোগী নাগরিক তৈরি করি। তা না হলে বাংলাদেশে একটি গোষ্ঠির রাজতন্ত্রের দিকে চলে যাবে, যা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবে না। আমাদের বুঝতে হবে, রাজনৈতিক অধিকারে প্রশ্ন বিসর্জন দিয়ে অন্য যে কোন অধিকার আদায় করা যায় না।